#পেত্নীর_সাথে_ঘর_সংসার_পর্ব_৮

পরদিন শ্বশুর মশায় এর জন্য শার্ট প্যান্ট কিনলাম। চেহারা নাক পর্যন্ত ঢাকার জন্য একটা রুমাল কিনলাম, পায়ে দেয়ার জন্য জুতা আর একটা সানগ্লাস কিনলাম, যাতে তার উল্টানো চোখগুলো দেখে কেউ ভয় না পাই।

শ্বুশুর মশায় বললেন: জামাই এসব টাকা দিয়ে কেনার কি দরকার ছিল, আমাকে দেখলে তো এগুলো এমনিতেই দিয়ে দিতো।"

শ্বশুর মশায় এটা অবশ্য মিথ্যে বলেনি, কারণ এরকম বিরাট বিরাট রেকর্ড আমার শ্বশুরের আগে থেকেই আছে। সে সবাইকে ভয় দেখিয়ে তাদের জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতো।

শ্বশুর মশায় এবার শার্ট প্যান্ট, জুতা পরে, মুখে রুমাল লাগিয়ে, চোখে চশমা লাগাল। তারপর কিছুক্ষণ কোমরে হাত দিয়ে পায়চারী করে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন।  তারপর জিজ্ঞেস করলেন: জামাই, আমাকে গতরাতের ইংলিশ সিনেমার নায়কটার মতো লাগতেছে তাইনা? 

শালার ভূতের কথা শুনে মাথায় খানদানী রাগ উঠে গেলো। ইচ্ছে হলো কষে একটা থাপ্পড় লাগায়। নিজেকে সামলিয়ে বললাম: আরে শ্বশুর মশায়, আপনাকে তো তার চেয়ে বড় হিরো মনে হচ্ছে এখন।"

শ্বশুর এবার বুক ফুলিয়ে বললেন: শুনেছি তোমাদের দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছে, তাই ভাবছি কয়েকটা বাংলা সিনেমা করে, বাংলা সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আচ্ছা জামাই, বাংলাদেশ কোন সুন্দরী নায়িকা আছে?"

--হ্যা, পরীমনি আছে....

-ওহ, তাহলে পরীমনির সাথেই আমি সিনেমা করব, ফাইনাল।

আর তুমি পরীমনিকে সুখবরটা বলে দিও। বলবা, সে আমার সাথে সিনেমা করার সুযোগ পেয়েছে, আমি তাকে আমার নায়িকা হিসেবে বেছে নিয়েছি।"

বুঝলাম এই বেটাকে এখনই না থামালে তার চাপার মাত্রা হিমালয়ের শীর্ষে উঠে যাবে। তাই বললাম: শ্বশুর মশায় এবার চলেন, হাসপাতালে যেতে হবে।"

--ওহ, চল চল.... আমি কিন্তু ডাক্তার হিসেবেও অনেক ভালো। রোগীর দিকে একবার তাকালেই সে সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু আমি যে ডাক্তার,  তোমাকে কে বলল? ও বুঝেছি, কারো প্রতিভা চাপা থাকেনা। কিন্তু জামাই, কার চিকিৎসা করতে হবে? রোগী কে?"

--রোগী আপনি নিজেই।"

--কি? আমি রোগী? কি হয়েছে আমার?"

--আপনার নাক কেটে অপারেশন করা হবে।

--মানে? জামাই, তুমি কিন্তু আমার সাথে বেয়াদবি করতেছ। আমার প্রেস্টিজ নিয়ে কথা বলতেছ। ভুলে যেওনা আমি তোমার শ্বশুর। তাছাড়া আমি হলাম সব ভূতের রাজা" শ্বশুর মশায় একটু রেগে উঠলেন। 

আমি বললাম: হুমমম, রাজ্য বিতাড়িতট ভূতের রাজা আপনি। শ্বশুর মশায়, এখানে থাকতে হলে আপনাকে একট ু তো মানুষের মতো হতে হবে, নাকি? নইলে তো থাকা যাবেনা।"

--কিন্তু নাক কাটলে ব্যথা পাব না তো।"

--কেন? আপনি জানেননা ব্যথা পাবেন কি পাবেননা? আপনি না বিশিষ্ট ডাক্তার? আপনার তো জানার কথা।"

--ও তাইতো, হ্যা জামাই চল.....

শ্বশুর মশায়কে নিয়ে হাসপাতালে আসলাম। উনি উঁকি মেরে হাসপাতালের নার্সগুলোকে দেখতে লাগলেন। আমি তাকে  টেনে নিয়ে এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার হরিপদ ব্যানার্জী চশমার ফাক দিয়ে সরাসরি নজর দিলেন আমার শ্বশুরের দিকে। আমার শ্বশুর ডাক্তারের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন: আমিও আপনার মতো ডাক্তার....."

আমি তাড়াতাড়ি শ্বশুরকে সামলে নিয়ে ডাক্তারকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম ওর মাথায় প্রবলেম আছে। 

ডাক্তার হেসে বললেন: আরে ওরকম কতপাগলকে আমি মানুষ করেছি অপারেশন করে। ওকে কেবল আমার হাতে ছেড়ে দাও।"

আমি বললাম: উনার নাকটা একটু বেশি লম্বা তাই অর্ধেক কেটে একটু অপারেশন  করে দিতে হবে নাকে।"

--আরে কোন সমস্যা না, আমি পাগলের ডাক্তার, নাকের ডাক্তার, দাঁতের ডাক্তার, চোখের ডাক্তার, সব ধরণের ডাক্তার আমি.....

আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: ও আপনি চোখের ডাক্তারও? উনার চোখেও সমস্যা আছে। একটু অপারেশন করবেন প্লিজ?"

ডাক্তার হরিপদ বললেন: হুমম, অবশ্যই, তার আগে রোগীকে ভালো করে দেখতে হবে। আপনারা সামনের রুমে গিয়ে অপেক্ষা করুণ, একটু পর রোগীকে ডাকা হবে।"

শ্বশুর মশায় বললেন: আমিও কিন্তু ডাক্তার,  ভুল চিকিৎসা করলে ধরে ফেলব।"

আমি তাড়াতাড়ি শ্বশুরকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। ওয়েটিং রুমে বসে টিভি দেখতে লাগলাম।  ডিসকভারি চ্যানেল চলছিল ওখানে। আমার শ্বশুর চিৎকার করে বললেন: এই, চ্যানেলটা পাল্টিয়ে একটা ইংলিশ সিনেমা দাও।"

আমি শ্বশুরের মুখটা চেপে ধরে বললাম: চুপ করুন শ্বশুর মশায়।"

তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন: জামাই সকাল থেকে তো কিছুই খাইনি, খাবারের ব্যবস্থা কর।"

--ঠিক আছে, আমি খাবার আনতে যাচ্ছি,  আপনি চুপচাপ এখানে বসে থাকুন। খবরদার,  কোন কথা বলবেননা।"

--ঠিক আছে, বলবনা...."

আমি খাবারের জন্য বাইরে গেলাম। ১৫ মিনিট পর খাবার নিয়ে ফিরে এলাম। আশেপাশে তাকিয়ে শ্বশুর মশায়কে খুঁজতে লাগলাম। কোথাও দেখতে পেলামনা। একজনের কাছে জানতে পারলাম, শ্বশুর টয়লেটে গেছে। 

যাক বাবা বাঁচা গেলো। আমি চেয়ারে নিশ্চিন্তে বসলাম। হঠাৎ একটা মেয়ের জোরে চিৎকার শুনে টয়লেটের দিকে তাকালাম।  দেখলাম, একটা তরুণী মেয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। আর শার্ট প্যান্ট, রুমাল, চশমা হাতে নিয়ে মহিলা টয়লেট থেকে ল্যাংটা হয়ে বের হচ্ছে আমার শ্বশুর......

(চলবে......)