#পেত্নীর_সাথে_ঘর_সংসার_পর্ব_১০

আমি শ্বশুরকে টানতে টানতে উপরের ঘরে নিয়ে গেলাম। একটু পর মা আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এলেন উপরে। মাকে বললাম: মা তুমি যাও, আমরা খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।"

মা বলল: না, আমি থাকি, তোদের আবার কিছু লাগতে পারে।"

শ্বশুর মশায় বললেন: হ্যা আপনি থাকুন....."

শ্বশুরের কথা শুনে খুব রাগ হলো তার উপর। এই ভূতের বেটা দেখি নিজের চেহারা দেখাইয়া আমার মাকে হার্ট এ্যাটাক করাতে চাই।

তাড়াতাড়ি করে বললাম: না মা, কিছু লাগবেনা আর, আমার বন্ধুটা এমনিতেই কম খাই।" মাকে জোর করে নিচে পাঠায় দিলাম। তারপর দু'জনে মিলে খাওয়া শেষ করে শুইতে গেলাম। 

শ্বশুর মশায় ঘুমিয়ে পড়লে একটা শেকল বাধলাম তার পায়ে। এই বেটার বিশ্বাস  নাই, মাঝরাতে উঠে আমার সুন্দরী ভাবীর রুমে গিয়ে উকি মারতে পারে। 

তারপর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। মধ্যরাতে কারো কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙল আমার। দেখি আমার শ্বশুর বাচ্চা ছেলের মতে "কুই কুই" করে কান্না করতেছে। 

--কি হয়েছে?" জিজ্ঞেস করলাম আমি।

শ্বশুর মশায় পেটে হাত দিয়ে বলল: পেটে চাপ ধরেছে।"

আমি তার শেকল খুলে দিয়ে বললাম:

--ও আচ্ছা,  ঠিক আছে,  আপনি নিচে যান। ওখানেই বাথরুম আছে। বাথরুম সেরে সোজা চলে আসবেন।"

--ঠিক আছে....

শ্বশুর মশায় নিচে গেলেন। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম তার জন্য।  এই ভূতেরা আবার টয়লেটে ঢুকলে সহজে বের হয়না।

অনেক্ষণ অপেক্ষা করে শ্বশুরকে ডাকতে যাবার জন্য বেড থেকে নামলাম। হঠাৎ ছোট ভাবীর জোরে চিৎকার শুনা গেলো। আমি তাড়াতাড়ি বের হলাম। ঘটনা কি বুঝতে আমার দেরি হলোনা। 

শ্বশুর মশায় নিজের কাজ সেরে ওদের রুমে উকি মারছিল। তখন ছোট ভাবিও বাথরুমে যাওয়ার জন্য বের হলো। আমার শ্বশুরের আসল চেহারা দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। 

আমি শ্বশুরকে তাড়াতাড়ি রুমে পাঠায় দিলাম। তারপর ছোটভাবিকে বাথরুমে নিয়ে মাথায় পানি ঢাললাম।  ততক্ষণে বাড়ির সবাই এসে গেছে। 

ছোট ভাবির হুশ ফিরে এলে সবাই জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছিল?"

ছোট ভাবি তখনও ভয়ে কাঁপতেছিল। কাঁপতে কাঁপতে বলল: আমি একটা ল্যাংটা ভূত দেখেছি...."

আমি তাড়াতাড়ি বললাম: হয়তো ভাবি চোখে ভুল দেখেছে। হ্যালুসিনেশন হয়ছে। যাও, সবাই ঘুমাতে যাও।"

কথা যেন আর না বাড়ে তাই তাড়াতাড়ি উপরে চলে এলাম।

রুমে এসে রেগে উঠে শ্বশুরকে বললাম: আপনি যে কাজটা করলেন ঠিক হয়ছে?"

শ্বশুর মশায় বললেন: আমি কি জানতাম  তারও এই সময়ে বাথরুম পাবে?"

--তো আপনি ওদের রুমে উকি মারছিলেন কেন?"

--দেখছিলাম ওরা কিভাবে ঘুমায়....

--ওরা কীভাবে ঘুমায়, তা দেখে আপনি কি করবেন? আর টয়লেট সেরে কাপড় পরেননি কেন?

--আমি তো ভাবলাম সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই ল্যাংটা থাকলেও সমস্যা নেই।" 

শালার ভূতের উপর অনেক রাগ হলো। এই ভূতকে কালকেই বিদায় করতে হবে। যতদিন ভাবিরা এখানে থাকবে, ততদিন আনা যাবেনা এখানে। 

পরদিন শ্বশুর মশায়কে নিয়ে একটা তান্ত্রিকের কাছে গেলাম। তান্ত্রিকরা ভূতদের নিজেদের আয়ত্তে রাখতে পারে। শ্বশুর মশায় প্রথমে যেতে চাইছিল না, পরে বললাম যে, তাকে মানুষ বানাতে নিয়ে যাচ্ছি। তখন রাজি হলো সে। 

তান্ত্রিকের কাছে গিয়ে বললাম: তান্ত্রিক মশায়, উনি আমার ভূত শ্বশুর,, আপনি কি উনার নাক,  চোখ গুলো ঠিক করে মানুষের মতো করে দিতে পারবেন?"

তান্ত্রিক মশায় বললেন: তুমি কোন চিনতা করোনা। ওকে কয়েকদিন আমার কাছে রেখে যাও।"

আহ! বাঁচা গেলো। শ্বশুর মশায়কে ওখানে রেখে চলে এলাম। যতদিন ভাবিরা বাসায় থাকবে, ততদিন ওখানেই থাকুক বদমাইশটা।

যে রাতগুলো তার সাথে থেকেছি একটা রাতও ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। শ্বশুর মশায়কে তান্ত্রিকের কাছে রেখে আসার পরের দুইটা রাত ভালোভাবে ঘুমালাম। কিন্তু তৃতীয় রাতে আবার খারাপ সময় গেলো আমার। কোথা থেকে যেন  একটা মোরগ এসে বাড়ির ছাদে "কুক্কুরু কু, কুক্কুরু কু," করছিল অনবরত। আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘড়িতে সময় দেখলাম, ভোর হতে আরো দেরি আছে। তাই আবার ঘুমাতে চেষ্টা করলাম।

কিন্তু মোরগটা একনাগাড়ে ডাকতে লাগল। আর ঘুমাতে পারলামনা বাকি রাত। সকালে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গেলাম। দেখলা মোরগটা ওখানে খাবার খুঁজে খুঁজে খাচ্ছে। আমি একটা ঢিল ছুড়ে মারলাম ওটার দিকে। মোরগটা কক কক করে উঠল। আমাকে দেখে আমার দিকে ছুটে এল। লাফ দিল আমার উপর।  এ কি রে, এটা দেখছি সংগ্রামী মোরগ। তাড়াতাড়ি ছাদের দরজা বন্ধ করে দিলাম। এই মুহূর্তে একটা মোরগের সাথে যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। 

নিচে এসে দাঁত ব্রাশ করছিলাম। মা আমাকে ডেকে বলল: রানা, তোর ভাবিরা  এসেছে, কিছু ভালোমতো খেতে দিতে পারিনি। যা একটু বাজার করে নিয়ে আয়।"

আমার তখন মনে পড়ল মোরগটার কথা। সারারাত আমাকে জালায়ছে। ওর মাংস খেয়ে প্রতিশোধ নেব। তাই বললাম: মা, আমি তো গতরাতেই অনেক বড় একটা দেশি মোরগ কিনে এনেছি। ছাদে আছে ওটা, তোমাদের সারপ্রাইজ দিব বলে বলিনি। যাও, ওটা জবাই কর।" 

--আচ্ছা,  তাহলে তুই কিছু পেয়াজ রসুন, আর তেল কিনে এনে দে।"

--ঠিক আছে মা, আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই। তারপর এনে দিচ্ছি,  আর শুন, মোরগটা সুন্দর করে রান্না করবা কিন্তু। মজা করে সবাই মিলে খাব আজ।

--আচ্ছা,  ঠিক আছে পাগলা।" মা হেসে দিল।

আমি ছাদে উঠে মোরগটা ধরে দুই ভাবির হাতে তুলে দিয়ে বললাম: এটাকে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই কর। মাংসগুলো বড় বড় করবে।"

দুইভাবী হেসে উঠে বলল: ঠিক আছে, ব্যাক সাইডটা তোমার জন্য বরাদ্দ থাকবে।"

আমি বললাম: যে সাইড হবে হোক, আগে জবাই কর।"

মোরগটা তখন কক কক করে চিৎকার করতেছিল। আমি খুশি মনে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হলাম। তারপর একটা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে বের হলাম বাজার করতে। পথে তান্ত্রিক মশায়ের সাথে দেখা।

--কি ব্যাপার, তান্ত্রিক মশায়, আপনি হঠাৎ এখানে?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

--আরে আর বলোনা, তোমার শ্বশুরটা বেশি কথা বলে, তাই তোমার শ্বশুরকে আমি মোরগ বানায় রাখছিলাম।  এখন ঐ মোরগটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।"

তান্ত্রিকের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। জিজ্ঞেস করলাম: মোরগটা কি রঙের?"

--লাল রঙের।" তান্ত্রিক জবাব দিলেন।

সর্বনাশ! আমার একমাত্র শ্বশুরকে আমি নিজ হাতে জবাই করতে পাঠালাম। এতক্ষণে হয়তো সব শেষ। তাড়াতাড়ি দৌড় দিলাম বাসার দিকে......

(চলবে...)