#পেত্নীর_সাথে_ঘর_সংসার_পর্ব_৭

ইদানীং শুনা যাচ্ছে রাত হলে নাকি কি একটা জন্তু দেখা যায়। মানুষের ঘরে ঢুকে চুরি করে। কেউ ধরতে গেলে হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। কেউ ধরতে পারেনা তাকে। পারদের মতো গলে যায়। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ল খবরটা। 

সন্ধযা হলেই লোকের ঘরে ঘরে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। যদি ঢুকে পড়ে জন্তুটা। ছোট ছোট বাচ্চারা সন্ধ্যার পর বের হয়না ভয়ে। 

এমন পরিস্থিতিতে একদিন আমি সন্ধ্যার পর বের হলাম দরজা খোলা রেখে। জন্তুটা ঢুকে যায় আমাদের বাসায়। হঠাৎ শুরু হয় চিৎকার চেচামিছি। 

ঘটনা বুঝতে আমার দেরি হলনা। দৌড়ে গেলাম বাড়ির দিকে। দেখলাম সবাই জন্তুটাকে ধরার চেষ্টা করতেছে। আর জন্তুটা সবার হাত ফসকে পারদের মতো  বেরিয়ে যাচ্ছে। জন্তুটা আমার পাশ দিয়ে  দৌড় দিল। অনেকদিন পর দেখলেও চিনতে পারলাম,  এটা আমার ল্যাংটা  শ্বশুর মশায় ছাড়া আর কেউ নয়।  আমিও দৌড় দিলাম শ্বশুরের পিছু পিছু। 

"শ্বশুর মশায়,  শ্বশুর মশায়" বলে চিৎকার করলাম কয়েকবার। আমার গলা চিনতে পেরে আমার খানদানি শ্বশুর মানচিত্র মেলে ধরে দাড়িয়ে পড়ল। 

আমাকে দেখে শ্বশুর মশায় খুশি হয়ে বলল: আরে জামাই যে.....তোমাকে দেখে খুশি হলাম।"

আমি বললাম: আরে রাখেন আপনার খুশি, আপনি সারা শরীরে তেল মেখে, বানরের মতো লাফিয়ে এসব কি করছেন? কেউ যদি জেনে যায় আপনি আমার শ্বশুর, তাহলে আমার খানদানি মর্যাদা কোথায় গিয়ে ডুবে যাবে আপনি জানেন?"

শ্বশুর মশায় কাঁচুমাচু করে বলল: কি করব জামাই? আমাকে ভূত রাজ্য থেকে বের করে দিছে তাই এখানে এসে এসব করতে হচ্ছে।"

অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: কি বলছেন? আপনি না ভূতের রাজা, আপনাকে বের করে দেবার সাহস কার।"

--ভূতের মেয়েগুলো প্রতিবাদ করেছে। আমি নাকি তাদের বেশি বগিটিজিং করি। তাই সবাই এক হয়ে আন্দোলন করে। আমার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। তখন আমি পালিয়ে আসি পৃথিবীতে।"

--ঠিক আছে শ্বশুর মশাই,  যা হবার হয়ছে। এখন থেকে আপনি আমার সাথে থাকবেন। কিন্তু এভাবে ল্যাংটা না, আপনাকে মানুষের মতো হতে হবে।

--কীভাবে?

--সেই ব্যবস্থা আমি করব। আর আপনাকে যে আসার সময় প্যান্ট বানিয়ে দিয়েছিলাম, প্যান্টগুলো কই, এভাবে ল্যাংটা থাকেন কেন?

আমার কথা শুনে শ্বশুর মশাই বললেন: প্যাণ্টগুলো কি এতদিন থাকবে? ওগুলো তো তখনই ছিড়ে গেছে।"

মনে মনে বললাম: শালার শ্বশুর, ভূতের  মেয়েদের সামনে মানচিত্রে বাতাস লাগানোর জন্য দিনে হাজার বার প্যান্ট খুললে তো প্যান্ট ছিড়বেই।"

কথাটা আর প্রকাশ না করে বললাম: উফ,, আজ অমাবস্যা হলে ভালো হতো.....

--কেন জামাই?"

--আরে অমাবস্যা হলে অন্ধকারে আপনাকে  দেখতে পেতামনা, আর  আপনার খানদানি মানচিত্রও দেখতে হতোনা। কালকের মধ্যেই আপনার শার্ট প্যান্টের ব্যবস্থা করতে হবে।"

--উফ, ইদানীং অনেক গরম পড়তেছে তাইনা জামাই.... "

শ্বশুর মশায় কথাটা কেন বলছে আমি আন্দাজ করতে পারলাম। কাপড় না পড়ার চিন্তাভাবনা করতেছে। তাই বললাম:-

--কোথায় গরম?  আমার তো আরও ঠান্ডা লাগতেছে। আপনি শরীরে তেল মেখেছেন তাই গরম লাগতেছে।"

আমার কথা শুনে আসন্ন ল্যাংটা বিরোধী অভিযানের কথা চিন্তা করে শ্বশুর মশাই মুখটা লাল করে ফেলল। এদের আবার মন খারাপ হলে মুখ লাল হয়ে যায়। 

সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে শ্বশুর মশায়কে নিয়ে আমার রুমে এলাম সবার নজর এড়িয়ে। শ্বশুর মশায়কে বললাম: শ্বশুর মশায়,  আপনি এখানে থাকুন, রুম থেকে একদম বের হবেননা। আপনি তো চুরি করে খেয়েছেন। এবার আমি খেয়ে আসি।"

শ্বশুর মশায় মাথা নেড়ে সায় দিলেন।

এরপর আমি রুম থেকে বেরিয়ে দরজায় তালা মারলাম,  বেটা আবার পালিয়ে যেতে পারে, ভূতদের বিশ্বাস নেই। 

খাওয়ার সময় মা আমাকে জিজ্ঞেস করল: কি রে,  তুই এখানে খেতে এসেছিস,  তাহলে তোর রুমে টিভি একটা ছেড়ে দিয়ে এসেছিস কেন?"

--কই নাতো...." বলার পর আমারও খেয়াল হলো হ্যা টিভির আওয়াজটা আমার রুম থেকেই তো আসতেছে। নিশ্চয়ই ঐ শালার শ্বশুর এর কাজ এটা।

মা বলল: এই তো শুনতে পাচ্ছিস না? দাড়া আমি দেখে আসি কে টিভি দেখতেছে।"

সর্বনাশ!  মা যদি দরজার ফুটো দিয়ে ঐ ল্যাংটা ভূতকে দেখে তাহলে তো হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাবে। অলরেডি মা দুইবার হার্ট এ্যাটাক করেছে।

তাড়াতাড়ি ভাতের প্লেট রেখে দৌড়ে এসে মাকে আটকালাম।

বললাম: মা মা মা, ওটা আমি ভুলে ছেড়ে দিয়ে এসেছি, দাঁড়াও আমি অফ করে দিয়ে আসতেছি। 

মা একটু রেগে বলল: এত বেখেয়ালি কেন তুই? যা, তাড়াতাড়ি টিভি বন্ধ করে ভাত খেয়ে যা।"

আমি দেরি করলামনা। তাড়াতাড়ি গিয়ে  তালা খুলে ভেতরে ঢুকলাম, দেখলাম শ্বালার শ্বশুর পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে,  খানদানী স্টাইলে বসে,  রিমোটটা হাতে নিয়ে টিভির সামনে ধরে টিভি দেখতেছে।"

আমার রাগ বেড়ে গেলো। আমাকে দেখে শ্বশুর মশায় বললেন: ও জামাই, এসো, দেখ কত সুন্দর একটা ইংলিশ সিনেমা চলতেছে।"

তার কথা শুনে আমি হাসব নাকি কাঁদব বুঝতে পারলামনা। বেটা ভূত, আবার ইংলিশ সিনেমা দেখতেছে, হাবভাব দেখে মনে হয় ইংলিশে তার কয়েকটা পি.এইচ.ডি করা আছে.....

তাড়াতাড়ি টিভি বন্ধ করে একটু মেজাজ দেখিয়ে বললাম: শ্বশুর মশায়,  টিভি একদম ছাড়বেননা।"

তারপর আর অপেক্ষা না করে আবার দরজায় তালা লাগিয়ে বাকি খাবার খেতে এলাম। 

খাওয়া শেষ করে, ফ্রেশ হয়ে রুমে এলাম। দেখলাম আমার শ্বশুর মশায় ঘুমিয়ে পড়েছে আমার খাটে। আমি তাকে তুলে খাটের নিচে শুয়ে দিলাম। তারপর লাইট অফ করে আমিও বেডে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আমার চোখের কোণে একটু একটু ঘুম এলো, ঠিক তখনই শুরু হলো শ্বশুরের খানদানী নাক ডাকা। সর্বনাশ! এভাবে নাক ডাকলে তো বাড়ির সবাই বোমা হামলা হচ্ছে মনে করে ছুটে আসবে। তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে শ্বশুরের লম্বা নাকটা চেপে ধরলাম। নাক ডাকা অফ হল। যখন নাক ছেড়ে দিলাম, আবার শুরু হল নাক ডাকা।  আবার চেপে ধরলাম নাক। শ্বশুর তখন ঘুমের ঘোরে বলল: নিচে ঘুমালে আমি নাক ডাকি,  খাটে ঘুমাতে হয়।"

তার কথা শুনে ইচ্ছে হলো তার লম্বা নাকটা ব্লেড দিয়ে কেটে বাঁশি বাজায়। মনের ইচ্ছাটা মনেতে চেপে বললাম: ঠিক আছে শ্বশুর মশায়, আপনি খাটে আমার পাশে শুইবেন, আসেন...

শ্বশুর মশায় বলল: ঘুমের মধ্যে আমি হেটে কিভাবে খাটে উঠব? তুমি আমাকে যেভাবে খাট থেকে নামাইছ, সেভাবে তুলো...."

ঘটনা আর লম্বা না করে বাধ্য হয়ে শ্বশুরকে খাটে শুয়াইলাম আমার পাশে.....

তারপর রাতটা কোনমতে পার করলাম.....

(চলবে........)😊