অশরীরী ভালোবাসা

#অশরীর_ভালোবাসা_১

লেখকঃ- মৃদুল চন্দ্র (Mridul Chandra) 

সে দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে আছে কিন্তু তবুও সে আমার হ্রদয়ের একটা কোনে আজো রয়ে গেছে৷ 

এখন ভাবছেন সে টা আবার কে তাই না 🙄

হ্যা প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক তবে সেই প্রসঙ্গে বলার আগে আমি কিছু ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। 

ওর ঠাম্মী প্রায় ১২ বছর আগে মারা যায় এবং তার কিছুদিন পর পরই ওর মা, বাবা, এবং ছোট ভাই রুদ্র এক অদ্ভুত অগ্নিকান্ডে ওদের বাসার মধ্যেই প্রান হারায়।। 🙁

ওর বাবা ছিলো যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক আর ওর মা ছিলো একটু সুখী মানুষ এই ধরুন একটু সৌখিন জিনিসগুলো বেশি ব্যবহার করতো আর নিত্যনতুন মেকাপ ব্যবহার করতো। 

আর ওর ছোটো ভাই তখন ক্লাস সিক্সে পা দিয়েছে ফাইভ এর সমাপনী শেষ করে।।।।।।😶

ওর সাথে পরিচয়ের আগে আমি  আমার মামা বাড়ি থেকে গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি মামাতো বোনকে সংজ্ঞে নিয়ে।

বিকেল ৫ টার বাসে মামা আমাদের দুইজনকে (১৩-১৪) নং সিটে বসিয়ে দিলো।

মামা দুজনের জন্য কিছু খাবার কিনে দিয়ে সাবধানে যাস বলে দুজনকে বিদায় জানিয়ে বাস থেকে নেমে গেলো। 

কিছুক্ষণ পর আমি আমার ব্যাগ থেকে একটা রচনা সামগ্রীর বই পড়া শুরু করে দেই আর আমার বোন (সিথী) তার (ট্যাব) দিয়ে গেইমিং করতেছে।

 হঠাৎ ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে ঠিক ৫ টা বাচতেই,,,,,,

ধীরে ধীরে গন্তব্যের উদ্দেশে গাড়ি চলতে থাকে আর আমরা আমাদের কাজ করতেছি।😶😶

আমাদের পিছনে বসা ফর্সা করে মুরুব্বি লোকটা একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে আর ফিক ফিক  ধোঁয়া বেরুচ্ছে তার মুখ থেকে।

কিছুটা বিরক্তিকর লাগলেও একই বাসের প্যাসেঞ্জার বলে তেমন কিছু রিয়্যাক্ট করলাম না ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করতেছি। 😏😏😏

ভাটিখালির ফেরীঘাটে পৌছাতে পৌছাতে আমাদের ঘন্টাখানিক সময় লেগে যায় তবে ফেরী ওইপাড়ে থাকাতে ড্রাইভার গাড়ি সাইট করে একটা গাছের  সমিল এর সামনে রাখলো।

তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে চারদিকে ঝিঝি পোকার আওয়াজ শোনা যায়। 🐝🐝

কিছুক্ষণ পর শোনা গেলো ওপারের ফেরি নস্ট হয়ে গেছে এবং ফেরী সেড়ে ফিরতে ফিরতে দেড়ি হতে পারে ড্রাইভার জানালো। 

সবাই একটু বিরক্তি বোধ করতেছে কথাটা শুনে,,,,

 এরপর কয়েকজন প্যাসেঞ্জার পিছন থেকে বিরবির করতে করতে বাস থেকে নিচে নেমে গেলো  চা, সিগারেট খাবে হয়তো। 🍷

আমি আমার বোন (সিথীকে) বললাম কিরে তোর খিদে পেয়েছে কিছু খাবি? 

উত্তর দিলো এখন তার কিছু খাওয়ার ইচ্ছে নাই কারন এখন সে গেইমিং এ মগ্ন। 😂

সিথীকে বললাম আমি একটু বাইরে যাচ্ছি তুই এখানেই বসে থাকিস যাবো আর আসবো তাৎক্ষনিক ভাবে ও মাথা নেড়ে উত্তর দিলো আচ্ছা  দাদা তারাতারি আসিস। 

আচ্ছা ঠিকাছে বলে নেমে গেলাম বাস থেকে ,,,,,,, 

আকাশে ক্ষানিকটা মেঘ জমে আছে, কিছুটা দূরে খেয়া ঘাটের পাশে মৃদু আলোয় একটা চায়ের দোকান দেখা যাচ্ছে।

 বাসের পাশে গাছের সমিলটা দেখে মনে হচ্ছে অনেক দিন আগের পরিত্যক্ত  আর চারদিকটা ঝিঝি পোকার শব্দে কেমন একটা থমথমে অবস্থা। 

আমি ফেরী ঘাটের দিক বরাবর পথ ধরে মিনিট দুই হেটে চায়ের দোকানের সামনে দাড়ালাম,, অমনি চায়ের দোকান থেকে এক বয়স্ক লোক বলে উঠলো বাবু চা দিবো নাকি সিগারেট? 

আমি মুচকি হেসে বললাম কাকা একটা রং চা দেন,,,, 

দোকানদার চা নাড়তে নাড়তে আমায় জিজ্ঞেস করলো আপনাদের গাড়ি কি সমিলের সাথে রেখেছে 🙄

আমি বললাম হ্যা ওইখানে সাইট করে রেখে দিয়ে ড্রাইভার বলল ফেরী নাকি নস্ট হইছে আসতে দেরি হতে পারে। 

দোকানদার একটু বিভ্রান্ত মুখ নিয়ে বলল গাড়িটা রাখার আর জায়গা পেলো না,,,,,,,

কথা শেষ করতে না করতেই চায়ের কাপ আমার হাতে এগিয়ে দিলো বলল বাবু আর কি দিবো, 

আমি বললাম না কাকা আর কিছু লাগবে না। 

চায়ে একটা চুমুক দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম সমিল টা অনেক পুরোনো তাই না 🙄🙄🙄

দোকানদার মুখটা নিচু করে কাজ করতে করতে বলল হুম অনেক পুরোনো,,তবে। 

তবে বলেই থেমে গেলো সে,,,, 

আমি বললাম তবে কি কাকা,, 🤔

দোকানদার হঠাৎ থ হয়ে গেলো মনে হচ্ছে সে কিছু বলতে যাবে তখন কিছু ভেবে আর বলেনি,,, 

সে আমার কথা শুনেও না শুনার ভান করে তার কাজ করতে লাগলো কিন্তু আমি আর তাকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করলাম না,,। 

চা শেষ করে তার পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে নদীর দিকে তাকালাম এবং নদীর কিনারার দিকে এক পা দুই পা এগোতে থাকলাম। 

নদীর ঢেউ গুলো থেকে কেমন অদ্ভুত শব্দ শোনা যাচ্ছে।  মনে হচ্ছে কাউকে হৈহৈ করে ধাওয়া দিচ্ছে আর কোনো ধাতব দন্ড  দিয়ে নুপুরের উপরে আঘাত করছে।

কিছুক্ষণ এভাবে শব্দ শুনতে শুনতে হঠাৎ একটা শীতল বাতাস গায়ে স্পর্শ করে গেলো মনে হচ্ছে বরফের আভা গায়ে ছুয়ে দিলো কেউ,,। 

সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠলো, কেমন যেনো একটা ভীতো ভাব এলো মনের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ আড়ালে  আমাকে দেখছে অন্য কোনো  দৃষ্টিতে। 

এরপর  আর কিছু না ভেবে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দিকে চলে আসলাম। 

সিথী গেইমিং করা শেষ করে মাথা গাড়ির জানালার দিকে এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর বাকি প্যাসেঞ্জার গুলোর কেউ কেউ বিরক্ত স্বরে ড্রাইভার কে ডাকতেছে। 

ড্রাইভার এই ড্রাইভার কি হলো ফেরী কি এলো, কখন আসবে আর কতক্ষণ বসে থাকতে হবে এই অপয়া জায়গায় 🙄

অপয়া জায়গার কথা শুনে আমি চমকে গেলাম এখানে এমন কি জায়গা যে অপয়া জায়গা নাম দিলো। 🤔

 আমি সিথীকে তার ঘুমে কোনো ভাবে বিরক্ত না করে সিটে এসে বসলাম। 

মোবাইলটা বের করে দেখি ৭ টা বাজতে আর ১২ মিনিট বাকি কিন্তু এখনো ভাটিখালির নদী পাড় হতে পারিনি। 

খুব বিরক্তি লাগতেছে এখন নিজের কাছেও , 

বাবা বারবার বলে দিয়েছিলো তাড়াতাড়ি রওনা দিতে।  কিন্তু সিথীটার জন্য দেরী হয়ে গেলো যতো ধরনের সাজুগুজু আছে সব ওর করতে হবে। 

তাছাড়া মেয়ে মানুষ নিয়ে যারা বেড়াতে গেছেন তারা এটা নিশ্চিত বুঝে গেছেন তারা কতটা দেরী করে রেডি হয়।

যাই হোক বাদ দেই এসব,  এবার বাকি কথায় আসি। 

হঠাৎ ফেরীর আওয়াজ শুনতে পেলাম  মনে মনে বললাম যাক বাবা অবশেষে ফেরী চলে এসেছে চিন্তা মুক্ত হলাম। কিন্তু পাশের মানুষদের মাঝে কোনো রিয়্যাক্ট চেঞ্জ হতে দেখতে পেলাম না।

তারা সেই আগের মতোই বলে চলছে ফেরী কখন আসবে ফেরী কখন আসবে ড্রাইভার ও ড্রাইভার। 

আমি ভাবলাম তারা হয়তো ফেরীর শব্দ শুনতে  পায় নি তাই এখনো চেচামেচি করতেছে। আমি তাদেরকে ভালো মন্দ কিছু বলিনি চুপ করে বসে আছি। 

সিথীর দিকে হাত বাড়িয়ে ওকে টোকা দিয়ে জাগাতে যাবো তখন আবার আমি ভাবলাম থাক এখনো অনেকটা দূরের পথ বেচারী ঘুমিয়ে থাকুক এই ভেবে ওরে আর বিরক্ত করিনি। 

অনেক্ক্ষণ কেটে গেলো কিন্তু ফেরীর এখনো কোনো দেখা নেই।

 আরও ২০ মিনিট আগে শুন্তে পেলাম ফেরীর শব্দ এখনো ঘাটে এসে পৌছালো না কেনো। 

কেমন একটা ব্যাপার হলো তাই না,, 

এই ২০ মিনিট এর মধ্যে ফেরী ঘাটে এসে পৌছে যাওয়ার কথা কিন্তু সেই ফেরীর কোনো হোদিস পাচ্ছি না। 

কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে তারাহুরো করে আবার বাস থেকে নিচে নেমে পড়লাম।

 নদীর কাছে যেয়ে দেখি ফেরী তো দূরে থাক কোথাও কোনো একটা নৌকাও নেই। মনে মনে প্রশ্ন জাগলো তাহলে আমি যে ফেরীর শব্দটা শুনলাম সেটা কি ভূল ছিলো 🤔

সেই চায়ের দোকানটাও বন্ধ করে দিয়েছে কোথাও এক বিন্দু আলো দেখতে পাচ্ছি না,, আকাশে এখনো মেঘ জমে আছে আর নদীর ঢেউ থেকে সেই অদ্ভুত ধরনের নুপুর ভাংগার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

বাইরে অনেকটা ঠান্ডা অনুভব কঅরতেছি , হয়তো নদীর কাছে  বাতাসের কারনে এমন ঠান্ডা অনুভব করাটা স্বাভাবিক। 

হঠাৎ পিছন থেকে মেয়ে কন্ঠ শুনতে পেলাম,,  যার জন্য অপেক্ষা করছেন তার আসতে বড্ড বেশি দেরি আছে।

পিছন ঘুরে তাকাতেই চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো অবস্থা,, 

একটি অপরুপা মেয়ে আমার সাথে সেধে সেধে ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলতেছে।

চোখ গুলো বলতে পারেন হরিনী চোখ যার দিকে তাকালে ক্রাশ খেতে আপনি বাধ্য। তবে তাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না যদিও মেয়েটা আমার সাথে সেধে এসে কথা বলতেছে।

কি জিজ্ঞেস করবো,, কি জিজ্ঞেস করবো ভাবতে ভাবতে বলে দিলাম আপনি কি করে জানলেন আমি কারো জন্য অপেক্ষা করতেছি? 😣

মেয়েটা এক অদ্ভুত হাসি  দিয়ে বলল এখানে যারা  আসে সবাই কারো না কারো জন্য অপেক্ষা করতেই আসে।।

আমি মেয়েটার কথায় একটা কিন্তুক খুজে পাচ্ছি । 

#চলবে___________?