পরিবর্তন আমি। শেষ পর্ব।

-এ কথা বলে যেই আমি সেখান থেকে চলে আসবো,অমনি শিলা আমার হাত ধরে ফেলে,আর বলে...

-শালা তোকে আজকে আমার সাথে নিয়েই যাবো,এতো দ্যামাক কিসের তোর।

আমি শিলাকে গালে একটা চড় মেরে সেখান থেকে চলে আসি।

শ্রাবণীর সাথে দেখা করতে লেকের পারে যাই।

শ্রাবণী বললো।

-এতো দেরি হলো কেন?সেই ১ঘন্টা যাবৎ তোমার জন্য এখানে বসে আছি,এই তোমার আসতে সময় হলো।

-আসলে রাস্তায় একটা ঝামেলা হইয়া গেছে।(আপনাদের বলে রাখি এর ফাঁকে আমি শ্রাবণী কে যে ভালোবাসি তাকে জানিয়ে দিয়েছি)

-কি ঝামেলা হইছে আমাকে বলো।

-আরে তেমন কিছু না,বাদ দাও।

-কিছু না মানে তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে তোমার কিছু একটা  হইছে,ও বুঝছি ওই শিলা তোমাকে আবার ডিস্টার্ব করছে তাই না।

দারাও ওর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। 

-আরে নাহ কিছু করা লাগবে না

সন্ধ্যা নেমে এলো, 

আমি বাসায় চলে আসলাম। 

এভাবে চলতে চলতে আমাদের রিলেশনের ২ মাস হয়ে গেলো।

আমার আর শ্রাবণীর বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে।

উভয় ফ্যামিলি আমার আর শ্রাবণী ভালোবাসা মেনে নিয়েছে।

বিয়ের আগের দিন কেনাকাটা করে বাসার দিকে ফিরছিলাম। 

আমার বন্ধু আমাকে বাসায় সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।

হঠাৎ পিছনদিক একটা মাইক্রো এসে আমাকে তিন থেকে চারটা মেয়ে জোড় করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

গাড়িতে উঠে দেখি সেই শিলা বখাটে মেয়েটা।

শিলা আমাকে বলতে লাগলো। 

-কি জান তুমি আমাকে রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবা, আমি বেঁচে থাকতে তা হবে না।

আজকে তোমাকে আমি বিয়ে করবো,চলো।

-শয়তান তুই কি ভাবছোছ তোর মতো মেয়েকে আমি বিয়ে করবো,জীবনেও না,মরে গেলেও না।

এই বলে আমি ওর মুখে থুথু দেই।

পাশ থেকে দুজন মিলে জোড় করে আমার হাত ধরে রাখে।

শিলা আমাকে গালে চড় মেরে বলে শালা তোর এতো দ্যামাক,আজকে সব শেষ করে দিবো।

কিছুক্ষণ পর ওরা আমাকে একটা নির্জন এলাকায় ছোট একটা ঘড়ে নিয়ে যায়।

পাশ থেকে দুজন আমাকে খাটে শুয়িয়ে দুই হাত চেপে ধরেছে।

আমি অনেক চিৎকার করলেও কেউ আসেনি।

ওরা পাচঁজন মিলে রাতভর চালায় আমার উপর শারিরীক নির্যাতন।

আমি চিৎকার করলেও কেউ বাঁচাতে আসেনি।

সেখান থেকে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম।

অচেনা যায়গা,রাস্তার মানুষ আমার দিকে আড়চোঁখে দেখতে লাগলো।

অনেক কষ্টে বাসায় গেলাম।

বাসায় গেলে সবাই আমাকে প্রশ্ন করতে থাকে সারারাত কোথায় ছিলাম?আমার চেয়ারা এমন হয়েছে কেন?জামা ছিরা কেনো।

আমি কোন কিছু না বলে আমার রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দেই।

মনে মনে ভাবি আমার সাথে এটা কি হয়ে গেলো।

আমার এই মুখ সবাইকে কিভাবে দেখাবো।

শ্রাবণী কে ফোন দিলাম।

শ্রাবণী বলতে লাগলো তোমাকে কালকে রাত থেকে ফোন দিতেছি,কোথায় ছিলে জানো আমি অনেক টেনশনে ছিলাম।

-আমার কিছু বলার ভাষা ছিলো না।

আমি শ্রাবণীকে বললাম আমাকে মাপ করে দিও।

এই বলে ফোন রেখে দিলাম।

প্রতিদিন পত্রিকায় খবর পড়তাম অমুক ছেলে ধর্ষন হয়েছে,তমুক ছেলে ধর্ষন হয়েছে।

আজ তা আমার সাথেই হলো। 

সিলিং ফ্যানের সাথে দড়িটা ঝুলছে।

অনেক কষ্টে দড়িটার সাথে নিজের গলা আটকিয়েছি।

মনে মনে বলতে লাগলাম পৃথিবীটা এতো নিষ্ঠুর কেন।

কেউ ভালোবাসার স্বপ্ন দেখায়,কেউ আবার কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দেয়।

কলঙ্কের দাগ নিয়ে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকলেও,আজীবন তা মাথায় করে বয়ে চলতে হবে।

হঠাৎ নিজ থেকে টুলটা পরে গেলো।

আমার হাত পা এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে,জিব্বাটা অনেক খানি বের হয়ে গেছে।

একটা জীবিত মাছ কাটলে যেমন করে তার থেকে কম নয়।

আস্তে আস্তে আমার চোখ বুজে আসছে।

শরীরটা অনেক ভারি হয়ে আসতেছে

শেষে একটা কথা বললাম শ্রাবণী আমাকে মাপ করে দিও,

আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি।

কিন্তু এই কলঙ্কের দাগ নিয়ে তোমার সাথে থাকতে পারবো না।

আমি ঝুলন্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলাম।

লেখকঃ রতন।

꧁ 𝐸𝓀 𝐵𝑒𝓁𝒶𝓇 𝐿𝒾𝓅𝒾𝓀𝒶 ꧂

পরিবর্তন আমি পর্বঃ ২

আসলে আপনি আমাকে যে রকম ভাবছেন,আমি আর দশটা মেয়ের মতো নই।

-হুম বুজলাম,তো কিছু বলবেন?

-হা বলতে তো চাই অনেক কিছু।

-হুম বলেন কি বলবেন?

-আসলে আমিইইই।

-হুম বলেন কি আমিইইই?

-আসলে আমিইইই আপনার সাথে এক কাপ কফি খেতে চাই।

-শুধু এক কাপ কফি,আর কিছু না।

-না আর কিছু না।

-ঠিক আছে, কালকে ক্লাস শেষে বের হয়ে কফি খেতে যাবোনি।

আমি বাসায় চলে আসলাম।

ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে হুমায়ুন আহমেদ এর নির্বাসন উপন্যাসটি পড়ছিলাম।

আর ওই মেয়েটির কথা ভাবছিলাম। 

কেন জানিনা অই মেয়েটার কথা বার বার মনে পরছে।

তাহলে কি আমি মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছি।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছি।

পরেরদিন কলেজের ক্লাস শেষে মেয়েটির সাথে একটি রেস্টুরেন্টে কফি খেতে যাই।

আমি বসা,ঠিক অপরপাশে মেয়েটি বসা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম কিছু কি বলতে চান,যদি কিছু বলার থাকে তারাতাড়ি বলে ফেলেন,আমার বাসায় যাওয়া লাগবে।

অনেক কাজ পরে আছে।

-আসলে আপনাকে একটা কথা বলবো বলবো করে ভাবছি,কিন্তু কিভাবে বলবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।

-বুঝছি আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না।

এই বলে আমি বেঞ্চ থেকে যেই চলে যাবো,অমনি শ্রাবণী আমার হাত ধরে ফেললো।

শ্রাবণী হলো সেই মেয়েটা যার সাথে আমি দেখা করতে আসছি।

আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম,

আমি বললাম।

-কি করছেন, আমার হাতে ব্যাথা লাগছে তো।

-শ্রাবন আমি তোমাকে ভালোবাসি।

এ কথাটি বলে শ্রাবণী আমার হাত ছেড়ে দিলো।

মনে মনে বললাম,যাগ বাবা এতো দিনে ভিতু মেয়েটা তাহলে তার মনের কথাটা বলে দিয়েছি।

আমি লজ্জায় মুচকি হাসি দিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসি।

আসবার সময় শ্রাবনী আমাকে বলে,তোমার রিপ্লাই এর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

আমি বাসায় চলে আসলাম।

মনে মনে শ্রাবণীর কথা ভাবছি।

বিছানার এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কোন কাজে মন বসছে না।

শ্রাবনীকে ফোন দিলাম।

ফোনে তার সাথে অনেক সময় ধরে কথা বললাম।

তবুও আমার ভালোবাসা তাকে প্রকাশ করলাম না।

মেয়ে মানুষ তো একটু না ঘুরারে কি করে হয়।

আগামীকাল বিকালে একটি লেকের ধারে শ্রাবণী তার সাথে দেখা করার কথা বলে।

পরেরদিন বিকালে শ্রাবণীর সাথে দেখা করার উদেশ্য রওনা দিলাম।

রাস্তায় কিছুদুর যাওয়ার পর শিলার সাথে আমার দেখা হয়।

আচ্ছা শিলার সম্পর্কে আপনাদের একটু বলে রাখি।

আমাদের কলেজের সবথেকে বখাটে মেয়ে হলো শিলা।

তার কাজ হলো ছেলেদের পিছু পিছু ঘুরা,আর ইভটিজিং করা।

শিলা বখাটে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে।

কিন্তু এই মেয়েটার থেকে সব সময় দূরে থাকার চেস্টা করি।

শিলা আমাকে বলতে লাগলো।

-কি সুন্দরী কোথায় যাচ্ছো আসো আমার বাইকের পিছনে,

তোমালে নিয়ে ডেটে যাবো,অনেক মজা হবে।

-তোর বাসায় কি বাপ,ভাই নাই।

রাস্তাঘাটে ছেলে দেখলেই শুধু ডিস্টার্ব করতে মন চায় তাই না।

লেখকঃ রতন। 

চলবে.....

꧁ 𝐸𝓀 𝐵𝑒𝓁𝒶𝓇 𝐿𝒾𝓅𝒾𝓀𝒶 ꧂

পরিবর্তন আমি।

প্রতিদিনের মতো মেয়েটা আমার পিছু ফলো করতে করতে আমার বাসার সামনে চলে আসছে।

-আমার নাম শ্রাবন।

আমি বরিশালের একটি বাসায় ভাড়া থাকি,পাশাপাশি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ালেখা করি।

ছেলে মানুষ হয়ে জন্মেছি তাই অনেক দিক খেয়াল রেখে চলতে হয়।

রাস্তাঘাটে বের হলে তো মেয়েরা শুধু ডিস্টার্ব করে থাকে।

প্রতিদিনের মতো আজকেও কলেজ থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে বাসার দিকে যাসছিলাম।

নিয়মিত ভাবেই সেই মেয়েটা আবার পিছু নিয়েছে।

আচ্ছা সবার আগে বলে রাখি,যে মেয়েটি প্রতিদিন আমার পিছু নেয় সে আমাদেরই কলেজে পড়ালেখা করে,মাস্টার্সে।

মেয়েটা হয়তো আমাকে পছন্দ করে।

তার ভাবভঙ্গিতে বুঝা যায়।

যাই হোক মুল ঘটনায় চলে আসি।

মেয়েটা বাইকে করে আমার পিছু করতে করতে সেই আমার বাসার সামনে চলে আসছে।

মেয়েটাকে যে আমার পছন্দ হয়না তা বলবো না।

মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর,আমার চোখে।

তবে দেখতে শুনতে একেবারে বোকা,ভিতু টাইপের মেয়ে।

তুই যদি আমাকে ভালোই বাসো তাইলে বলে দিলেই তো হয়।

এতো ন্যাকামি করার কি আছে।

পরের দিন সকালে কলেজে যাই।

ক্লাস শেষে রিকশা করে বাসার দিকে ফিরছিলাম। 

বাসার সামনে এসে রিকশা থেকে নামলাম।

ওই মেয়েটি রাস্তার অপরপ্রান্তে বাইক নিয়ে দারিয়ে আছে।

নাহ আজকে একটা ফয়সালা করতেই হবে।

আমি মেয়েটিকে হাত ইশারা করে ডাক দিলাম।

মেয়েটি কাছে আসলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,কি আপনি আমার প্রতিদিন পিছু নিচ্ছেন কেন?ব্যাপারটা কি?

মেয়েটি ভয়ের গলায় বললো।

-না আসলে আমার বাসাও এই দিকে তো তাই এই রাস্তা দিয়েই আমি প্রতিদিন যাই।

-সে তো দেখতেই পারছি।

ছেলে মানুষ দেখলেই শুধু পিছু নিতে মন চায় তাই না।

লেখকঃ রতন।

চলবে....

꧁ 𝐸𝓀 𝐵𝑒𝓁𝒶𝓇 𝐿𝒾𝓅𝒾𝓀𝒶 ꧂