#পেত্নীর_সাথে_ঘর_সংসার_পর্ব_৯

হঠাৎ পুরো হাসপাতালে "ভূত ভূত" বলে চিৎকার শুরু হলো।  কেউ কেউ ভয়ে পালিয়ে গেলো।   আমার শ্বশুর মানচিত্র দেখায় দিয়ে সবার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমি এমন ভান করতে লাগলাম যেন ওকে আমি চিনিই না। শ্বশুর মশায় যেন আমাকে দেখতে না পায়, সেজন্য লোকজনের আড়ালে ছিলাম। সবার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও  "ভূত ভূত" বলে চিৎকার করলাম কিছুক্ষণ।  তারপর পরিস্থিতি শান্ত হলে আস্তে করে বের হয়ে বাসায় চলে এলাম। 

শ্বশুরের সাথে আমার আবার দেখা হয়  রাতে। আমার রুমের জানালায় মুখ লাগিয়ে সে আস্তে আস্তে করে "জামাই জামাই" বলে ডাকছিল আমাকে। আমি  দরজা খুলে বের হলাম। তাকে সবার চোখ ফাকি দিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসলাম আবারও। 

তারপর রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম: শ্বশুর মশায়, আপনি টয়লেট থেকে ল্যাংটা বের হয়ছেন কেন?"

শ্বশুর মশায় জবাব দিলেন: আমি  ভুলে গিয়েছিলাম।  আসলে ল্যাংটা থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় কাপড় পরতে মনে ছিলনা।"

--আচ্ছা যাইহোক,  এখন থেকে সবসময় কাপড় পরে থাকবেন, মনে থাকে যেন।

--আচ্ছা...  এখন আমাকে কিছু খেতে দাও।"

আমি তখন আমার জন্য বরাদ্দ রাতের খাবারগুলো এনে শালার ভূতকে খাওয়ালাম। তারপর সেই রাতটাও আগের রাতের মতো কাটালাম। 

পরদিন শ্বশুর মশায়কে নিয়ে অন্য একটা হাসপাতালে গেলাম। কক্সবাজার সেন্ট্রাল হসপিটাল। ওখানেও দেখি ডাক্তার হরিপদ ব্যানার্জী আছে। উনাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম: ডাক্তার বাবু, আপনি এখানে?"

হরিপদ জবাব দিলেন: হ্যা, আগের হাসপাতালে ভূত আছে, তাই এখানে চলে এলাম। আমি আবার ভূতকে বেশি ভয় পাই।"

ডাক্তার হরিপদের কথা শুনে আমার শ্বশুর হঠাৎ "হা হা" করে উঠলেন। আমি তাকে হাসি থামাতে বললাম।

এরপর ডাক্তার আমার শ্বশুরকে  অপারেশন রুমে নিয়ে গেলেন। আমি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এখানে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলাম। ডাক্তার হরিপদ বললেন: মুখ থেকে রুমালটা সরান, ডাক্তারকে লজ্জা পেতে হবেনা।"

এরপর কিছুক্ষণ কোন কথা শুনা গেলনা। কিছুক্ষণ পর ডাক্তারে কথা শুনা গেলো আবার: কি হল? রুমালটা সরান, ওটা না সরালে নাকের অপারেশন করব কী......" ডাক্তার কথাটা শেষ না করেই "আ...আ...আ..." করে চিৎকার দিয়ে উঠলেন। আমি তাড়াতাড়ি গেলাম ওখানে। দেখলাম,  আমার শ্বশুরের চেহারা দেখে ডাক্তার হরিপদ বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। সর্বনাশ। শ্বশুরকে বললাম: শ্বশুর মশায়, আপনি মুখে রুমাল লাগিয়ে এখানে দাঁড়ান,  আমি অন্য একটা ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসছি।"

শ্বশুর মশায় মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।

আমি অন্য একটা ডাক্তার ডাকতে গেলাম। ডাক্তার নিয়ে এসে দেখলাম,  আমার শ্বশুরের কাপড় পরে ডাক্তার হরিপদ নিচে পড়ে আছে, আর আমার শ্বশুর নেই। 

অন্য ডাক্তারটা ডাক্তার হরিপদকে দেখতে লাগলেন, আর আমি শ্বশুর মশায়কে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম একটা কেবিনে, সেই কেবিনে একটা সুন্দরী মেয়ে রোগী ছিল। 

আমার শ্বশুর ডাক্তারের পোশাক পরে, মেয়েটার হাত-পা টিপে টিপে দেখতেছিল। মুখে রুমালটা ছিল তার। সেই রুমালটা সরিয়ে আমার শ্বশুর মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল: এখন কেমন লাগতেছে তোমার?"

মেয়েটা আমার শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে জবাব দিতে যাবে, তখন "আ...আ...আ" করে চিৎকার দিয়ে উঠল। তারপর বেহুশ! আমি তাড়াতাড়ি শ্বশুরকে বললাম: শ্বশুর মশায়, পালান....নইতো আজ আমার একদিন কি আপনার দশ থেকে বার দিন।" শ্বশুরের হাত ধরে টানতে টানতে কোনমতে পালিয়ে এলাম হাসপাতাল থেকে। বুঝলাম, হাসপাতালে কাজ হবেনা।  শ্বশুরের ব্যবস্থা অন্যভাবে করতে হবে।

সারাদিন শ্বশুরকে নিয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরে কোন ব্যবস্থা করতে না পেরে  রাতের বেলায় চুপিচুপি আমার রুমে ঢুকলাম। তখন সামনে পড়ে গেলাম আমার মা ও আরও কয়েকজন মেহমানের সামনে।  ভাগ্যিস শ্বশুরের মুখে রুমাল ছিল, নয়তো আম্মুর তৃতীয় বারের মতো হার্ট এট্যাকটাও হয়ে যেত এতক্ষণে। 

শ্বশুরকে দেখে মা বললেন: এটা কে?"

আমি বললাম: মা,  ও আমার বন্ধু, আজ আমার সাথে থাকবে।" 

আমার শ্বশুর মশায় তখন আমার গলায় হাত দিয়ে বন্ধু মতো করে বলল: হ্যা খালাম্মা, আমরা বন্ধু।" 

মা বললেন: ও, কিন্তু রানা, আজ তোর রুমে তোর ভাবিরা থাকবে। ওরা আজ বেেড়াতে এসেছে। কয়েকদিন থাকবে। তুই তোর বন্ধুকে নিয়ে উপরের ঘরে থাকিস।"

আমি ভাবিদের দিকে তাকালাম। অনেকদিন পর বেড়াতে এসেছে এরা। আমার মামাত দুই ভাই এর বউ। এরা আসলেই আমার রুমটা তাদের দখলে চলে যায়। 

আমাকে চুপ থাকতে দেখে বড় ভাবি বললেন:- কি দেবর বাবু, রুম দখল করেছি বলে কি রাগ হচ্ছে?"

--না, না ভাবি তোমরা আমার রুমে যতদিন খুশি আরাম কর। তবে আগের মতো একটু কম জালায়ও আমাকে।"

তখন ছোটভাবি আমার কান ধরে বললেন: এবার বেশি করে জালাব বলে এসেছি....."

হঠাৎ আমার শ্বশুর বলে উঠলেন: ভাবি, আমাকেও একটু কানটানা দেন। কতদিন কারো কানটানা খাইনা।"

শ্বশুরের কথা শুনে অনেক রাগ হলো। তাড়াতাড়ি তাকে পিঠে একটা হাত দিয়ে মেরে বললাম: চল দোস্ত, আমরা উপরের ঘরে যায়। এই ভাবি দুইটা তোকেও পাগল করে দেবে।"

শ্বশুর মশায় বললেন: আমি পাগল হতে রাজি আছি, দেখি কেমন পাগল বানাতে পারে আমাকে......"

(চলবে........)